চরফ্যাশন ও মনপুরানৌরুটের তাসরিফ-১ও ৪ লঞ্চ বন্ধে যাত্রী ভোগান্তি চরমে,লোকসানের মুখে ইজারাদার
ভোলা চরফ্যাশনের বেতুয়া হাতিয়া ভায়া ,মঙ্গল শিকদার, তজুমদ্দিন হাকিমুদ্দিন,দৌলতখান ও ইলিশা রুটের মেসার্স ফেরারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের তাসরিফ-১ ও তাসরিফ-৪ যাত্রীবাহি লঞ্চ দু’টি নিয়ন্ত্রণহীণ চলাচল ও পল্টুন ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এত চরম দূর্ভোগে পড়েছে যাত্রী ও ঘাট ইজারাদারগণ।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, গত (৩০/১০/২০২০) তারিখ তাসরিফ-১ লঞ্চটি ষাটনল হয়ে দশ আনি নামক স্থানে মেসার্স ফারহান নেভিগেশন লিমিটেডের এমভি ফারহান-৪ লঞ্চটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এছাড়া ইলিশা ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত করারও অভিযোগ করা হয়।
অপরদিকে তাসরিফ-৪ লঞ্চটি সদর ঘাটের নির্ধারিত টার্মিনালে না ভিরে আগানগর খেয়াঘাটের পল্টুনে ভিরার সময় পল্টুনের ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ করা হয়।
কিন্তু ফেরারী মেসার্স ফেরারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত বক্তব্যে জানান, দশ আনি নামক স্থানে তাসরিফ-১ নয় বরং ফারহান-৪ লঞ্চটি তাসরিফ-১ লঞ্চটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিসাধন করে। ওই ঘটনার বিবরণ সহ গত( ৯/১১/২০২০) তারিখে মেসার্স ফেরারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের পরিচালক নৌ নিট্রা বিভাগে মেসার্স ফারহান নেভিগেশন লিমিটেডের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু কোনরুপ তদন্ত ছাড়াই রহস্যজনক কারণে তাসরিফ-১ চলাচলে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
অপরদিকে তাসরিফ-৪ লঞ্চটির বেলায় বলা হয়, সদরঘাট টার্মিনালে পর্যাপ্ত লঞ্চ ও যাত্রী থাকায় বার্দিং করার সময় লঞ্চের ইঞ্জিন গিয়ার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় আগানগর খেয়াঘাটের পল্টুনে আঘাত লাগে। এতে জানমালের কোন ক্ষতি হয়নি। পল্টুনের অল্প-স্বল্প ক্ষতি বিআইডব্লিউটিএ’র তদারকিতে নিজ খরচে মেরামত করার অঙ্গীকার করে (১৬/১১/২০২০) তারিখে দরখাস্ত প্রদান করা হয়। কিন্তু ওই আবেদনে সাঁড়া না দিয়ে যাত্রী ও ইজারাদারদের স্বার্থ বিবেচনা না করে মেসার্স ফারহান নেভিগেশন লিমিটেডকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য তাসরিফ-১ লঞ্চটির চলাচলে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
ভোলা বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, কি কারণে লঞ্চ দু’টি বন্ধ আছে তা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বলতে পারবে। তবে শীতে যাত্রী ভোগান্তি ও ইজারাদারদের ক্ষতির কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সহসা এ সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
লঞ্চ বন্ধের প্রসঙ্গে বোরহানউদ্দিনের হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাটের ইজারাদার উজ্জল হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন ওই লঞ্চ দুটিতে প্রায় ২ শত যাত্রী যেত। যাত্রী ভোগান্তি তো হচ্ছেই। করোনাকালে আমরা ২ মাসের বেশী আয় থেকে বঞ্চিত ছিলাম। এ পরিস্থিতিতে লোকসানের পরিমান আরো বাড়লো।
দৌলতখান ঘাটের ইজারাদার শফিউল্যাহ জানান, ঘাটে তাঁর ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। লাভ দূরে থাক চালান উঠানো দায় হয়ে পড়েছে। ওই ঘাট দিয়ে এলাকার দেড় থেকে দুইশো যাত্রী যেত। এখন তাঁরা বিকল্প পথে যাবে। ফলে লোকসান আরো বাড়লো।
একই কথা বললেন, তজুমদ্দিন ঘাটের সুপারভাইজার মঞ্জু মীর ও ইজারাদার কামাল মীর। মনপুরা ঘাটের সুপারভাইজার এনায়েত ও ইজারাদার আ. সালাম।
এ ব্যাপারে মনপুরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুল আলম শাহীন বলেন, একসময় ফরহান এ রুটে একমাত্র লঞ্চ ছিল। তখন যাত্রীসেবার মান ছিলনা। আরো কয়েকটি লঞ্চ আসায় যাত্রীসেবার মান বেড়েছে। কিন্তু লঞ্চ বন্ধ করা কোন যৌক্তিক সমাধান হতে পারেনা।
বোরহানউদ্দিন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নীল রতন দে বলেন,এক সময় ফারহান যাত্রীদের উপর জুলুম করতো। প্রতিযোগীতার বাজারে আরো লঞ্চ যুক্ত হওয়ায় সেবার মান বেড়েছে। শীতের এ সময়ে যাত্রীদের স্বার্থে তিনি লঞ্চ নিয়মিতকরণের দাবি জানান।
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসান বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা উচিত।
এদিকে ওই দুটি লঞ্চ বন্ধ থাকায় ওভারলোড করে অন্য লঞ্চগুলো যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন এতে করে চরম দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে ।